Home / Grid Featured Posts / অদ্ভূত সুন্দর এক জলরাশি- টাঙ্গুয়ার হাওড়!

অদ্ভূত সুন্দর এক জলরাশি- টাঙ্গুয়ার হাওড়!

অদ্ভূত সুন্দর এক জলরাশি- টাঙ্গুয়ার হাওড়!

শুরুতেই বলে রাখি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বর্ষায় গেলে এক ধরনের মজা আর শীতের দিনে গেলে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মজা! আমি গেছি গত বর্ষায়!

ঢাকা থেকে গাড়ী নিয়ে গিয়ে বিশেষ কোন সুবিধে হবেনা। তার চেয়ে বরং… বাসে করে সোজা চলে যাবেন সুনামগঞ্জ। ভাটির দেশ সুনামগঞ্জ! সুনামগঞ্জ শহরের ঘাট থেকে ২ দিনের জন্য একটা ইঞ্জিন বোট ভাড়া করতে হবে। ভাড়া প্রতিদিনের জন্য কম-বেশী ৩০০০/- টাকা! ভাল দেখে নৌকা নেবেন। আশ-পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে হলে ছই-এর উপর সারাদিন কাটাতে হবে। ছই-এর উপরটা টিন সীট দিয়ে মোড়ানো, সাইডে বসবার ব্যবস্থা আছে এমন নৌকা হলে ভাল। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রকৃত মজা নিতে হলে এই নৌকাতেই রাত্রি যাপন এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়া-কর্ম সারতে হবে… এটা ধরে নিতে পারেন।

যাত্রা হলো শুরু

সুনামগঞ্জ থেকে সকাল সকাল নৌকা ছাড়া ভাল। সুরমা নদী দিয়ে যাত্রা শুরু হবে … তারপর এই নদী সেই নদী, এই খাল সেই খাল পাড়ি দিয়ে আপনাদের নৌকা চলবে টাঙ্গুয়ার হাওড় অভিমুখে। পথে বিশ্বম্বরপুর এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর পরবে। তাহিরপুর উপজেলা সদরে রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেবেন। তাহিরপুরে রাত্রি যাপন করলে টাঙ্গুয়ার হাওড় দেখে সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসতে হবে তাহিরপুরে। তবে দরকার কি?! সঙ্গী কোন মহিলা অভিযাত্রী না থাকলে রাত্রি যাপনের জন্য আপনাদের নৌকা-তো রয়েছেই! তাহিরপুরে এক কাপ চা খেয়ে সোজা চলে যান টাঙ্গুয়ার হাওড়! আর হ্যাঁ… ঢাকা থেকে শুনে যেতে পারেন…টাঙ্গুয়ার হাওড়ে একটা সরকারী রেস্ট হাউজ আছে! আসলে সেটা কোন রেস্ট হাউজই নয়। কনক্রিটের পিলারের উপর টিনের ঘর। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের মাছ পাহারা দেবার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসাররা থাকে ওখানে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব নিজেও ওখানে কখনও থাকেন না। ওটা থাকার মত কোন জায়গা-ও না।

বর্ষায় ভরা খাল-বিল!

বর্ষার টাঙ্গুয়াঃ

বর্ষায় গেলে নৌকাই একমাত্র বাহন। উত্তর দিকে মেঘালয় রাজ্যের খাড়া পাহাড় আর তিন দিকে থৈ থৈ পানি! মাঠ-ঘাট সব পানি আর পানি! ভাটির দেশের প্রকৃত রূপ! সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা আর কিশোরগঞ্জ- এই তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত সেই অদ্ভূত জলরাশি। এই জলরাশির ভিতরেই মেঘালয়ের পাদদেশে টাঙ্গুয়ার হাওড়! বর্ষায় আলাদা করে টাঙ্গুয়ার হাওড় বলে কিছু থাকেনা… সব একাকার! টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পৌঁছালেই দেখবেন গভীর কালচে পানি — অনকে দূর পর্যন্ত কোন গাছ-গাছালীর উপরাংশ পানির উপরে দেখা যাচ্ছেনা! তখনই বুঝবেন আপনি যথাস্থানে পৌঁছে গেছেন।

অকূল পাথার!…. ঝমঝম বৃষ্টি! আমরা যখন টাঙ্গুয়ার মাঝখানে।

এই পথে গেলে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্রাম ‘বাগলী’। খাতা খাতা কলমে নাম ‘বীরেন্দ্রনগর’। ওখানে বিডিআর-এখানে বিডিআর-এর একটা বিওপি রয়েছে। ছোট্ট একটা বাজার রয়েছে। ইলেকট্রিসিটি রয়েছে। বাগলী বিডিআর ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে এখানেই রাত্রী যাপন শ্রেয়ঃ! নিরাপত্তা সমস্যা এমনিতেও নেই, তারপরও আপনি নিশ্চিত হতে পারলেন!

শীতের টাঙ্গুয়াঃ

শীতকালে আপনি সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিঃমিঃ দূরে ইট বিছানো এবং কাঁচা রাস্তা ধরে টেকের ঘাট (টেকেরহাট নয়) পর্যন্ত মটর সাইকেলে যেতে পারবেন। তারপর সেই নৌকা আপনাকে নিতেই হবে। টেকেরঘাট দিয়ে ইন্ডিয়া থেকে কয়লা, পাথড় আমদানী হয়। সেখানে রাতে থাকার জায়গা পেতে পারেন। খাবার হোটেলও পাবেন। নৌকা নিয়ে সারাদিন টাঙ্গুয়ার হাওড় বেড়িয়ে আবার সন্ধ্যায় টেকেরঘাটে ফিরে আসতে পারেন। তবে সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা ভাড়া নিতেই আমি সাজেষ্ট করবো।

জল-ই যখন জীবন জীবিকা!

শীতে গেলে মূল টাঙ্গুয়ার হাওড় অংশটুকু ছাড়া চারিদিকে থৈ থৈ পানি পাবেন না। পাবেন নদী, সবুজ ধানক্ষেত… আর সেই ধানক্ষেতে বাতাসের দোল খেলা! নদী এবং খালে-বিলে পানি থাকবে, আর থাকবে শীতের পরিজায়ী অতিথি পাখি! অতিথি পাখিদের ছবি তোলার জন্য অনেক ফটোগ্রাফার এবং পাখি প্রেমিকরা এই সময় টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বেড়াতে আসেন। আর শীতের দিনে আশা করি মাছও পাবেন প্রচুর! পাবেন আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা!

ঢাকায় ফেরাঃ

ফেরার পথে আবার সুনামগঞ্জ হয়ে না-ই বা ফিরলেন। টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে নৌকা যোগে চলে যাবেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা বা মোহনগঞ্জ। নতুন একটা রুট ঘুরে আসা হবে। সেখান থেকে লোকাল বাসে নেত্রকানা শহর, নেত্রকানা থেকে ডাইরেক্ট বাসে সোজা ঢাকা। সময়ও লাগবে কম। এখানে বলে রাখা ভাল…. ‘কলমাকান্দা-নেত্রকোনা’ সড়ক পথ আমার দেখা সবচেয়ে বাজে রাস্তা! তবে কলমাকান্দা থেকে নেত্রকানা যেতে সময় লাগবে মাত্র ঘন্টা দুয়েক! সুনামগঞ্জ থেকে নৌকা ভাড়া করবার সময় মাঝিকে এই রুটে ফেরার বিষয়টি আগেই মিটিয়ে নেবেন।

পিছে ফেলে আসা অপরূপ মোহনীয় স্মৃতি!

টিপসঃ

ক) আর্মি বা বিডিআর-এর কোন রেফারেন্স থাকলে বাগলী (বীরেন্দ্রনগর) বিডিআর বিওপি-তে আতিথেয়তা পেয়ে যেতে পারেন (যেমন আমরা পেয়েছিলাম)। তাহলে আর কোন চিন্তাই নাই! থাকার বিছানা-পত্র আর রান্নার ঝামেলা মিটেই গেল। তবে আপনাকে থাকতে হবে আপনাদের নৌকাতেই!

খ) টাঙ্গুয়ার হাওড় ও আশে পাশে গ্রামীণ ফোনের ভাল নেটওয়ার্ক পাবেন। অনেক দূরে গেলেও কাছের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার ভয় নেই। শুধু বাগলী বাজারে চা খেতে খেতে মোবাইলটা চার্জ করে নিলেই হবে। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবেন কতটুকু সময়ের জন্য..তা আগাম বলা মুশকিল।

গ) যাবার সময় সুনামগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় টুকি-টাকি কিনে নেবেন। ধুমপানের অভ্যেস থাকলে অন্ততঃ দুইদিনের রসদ সাথে নিতে ভুলবেন না!

লেখকঃ নীল ভোমরা
ছবিঃ নেট

Check Also

13254566_1165992143434566_7635174404760625500_n

লালাখাল:

মেঘালয় পর্বত শ্রেনীর সবচেয়ে পুর্বের অংশ জৈন্তিয়া হিলসের ঠিক নীচে পাহাড়, প্রাকৃতিক বন, চা বাগান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by themekiller.com anime4online.com animextoon.com apk4phone.com tengag.com moviekillers.com