প্রকৃতির সৌন্দর্যে শোভিত অপরূপ এক লীলাভূমি সিলেট। আর তার সাথে রয়েছে প্রকৃতির অসাধারণ রূপ-লাবন্যে ঘেরা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ‘বিছনাকান্দি’। সিলেটের গোয়াইনঘাটের নতুন পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসছে। সারি সারি নীল পাহাড়ের কোলে পাথর বিছানো বিশাল বিছানায় (বিস্তৃত এলাকায়)জলের ছুটাছুটি। পাহাড়ের বুক চিরে বের হয়ে আসা ঠাণ্ডা পানির স্রোত। যা আপনাকে দু হাত প্রসারিত করে আলিঙ্গন করবে সব সয়মই। প্রকৃতির সৌন্দর্যে শোভিত অপরূপ এই লীলাভূমির নাম বিছনাকান্দি। প্রকৃতির অসাধারণ রূপ-লাবন্যে ঘেরা স্থানটি ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। বর্ষার দিনে বিছনাকান্দির পূর্ণ যৌবনে লাভ করে। যাতায়াত হয় অনেক সহজ। গরমের অস্বস্তি থেকে প্রকৃতির কোলে শান্তি পেতে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন বিছনাকান্দি থেকে। সিলেটের স্বর্গীয় বিছানা নামে বিছনাকান্দিতে আপনি পেতে পারেন প্রকৃতির মনোরম লাবণ্যের স্পর্শ। একে জীবন-যাপনের যাবতীয় ক্লান্তি বিসর্জনের জন্য চমৎকার যায়গা বললেও বরং কম হয়ে যায়।
কী ভাবে যাবেনঃ বিছনাকান্দির এমন সৌন্দর্য বরষা চলে গেলে বা পানি কমে গেলে আর থাকেনা। তখন এটা একটা মরুদ্যান মতো লাগে। পাথর বহন করার জন্য এখানে চলে অজস্র ট্রাক আর ট্রাকটর। সুতরাং অক্টোবর পর্যন্ত বিছনাকান্দি যাবার মোক্ষম সময়। মন চাইলে এখনি চলে যেতে পারেন।ঢাকা থেকে প্রথম আপনাকে সিলেট শহরে যেতে হবে। তার পর সেখান থেকে বিছনাকান্দি যাবার কয়েকটা পথ রয়েছে। আপনি চাইলে নদী পথে যেতে পারেন। আবার সড়কপথে নিজস্ব বাহন, সিএনজি চালিত অটো রিকসা কিংবা লেগুনা ভাড়া করে দল বেঁধে যেতে পারেন। নদী পথে গেলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে পাংখুমাই। সেখান থেকে ট্রলারে চেঁপে বিছনাকান্দি। পাংখুমাই হয়ে বিছনাকান্দি গেলে বাড়তি পাওনা এখানকার বিশাল ঝর্না আর পিয়াইন নদীর অপরূপ রূপসূধা। পাংখুমাই যেতে সময় লাগে দেড়ঘন্টা। সেখান থেকে বিছনাকান্দি আরও দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পথ। সড়কপথ হলে সিলেট শহর থেকে যে কোন বাহনে চেপে চলে যান হাদারপার বাজার। সেখান থেকে নৌকায় বিছনাকান্দি। যেভাবেই যান হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিঁচুড়ি খালি পেটে অমৃত সুখ দেবে আপনাকে।
তবে আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ সড়ক পথে বিছনাকান্দি যাওয়া। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে হাদারপার খেয়াঘাঁটে নৌকার মাঝি যাচ্ছে তাই ভাড়া চাইবে। দরদাম ঠিক করে কম পক্ষে তিন ঘণ্টার জন্য হাদার পার থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে তবেই বিছনাকান্দির পথ ধরুন। ভাড়া ৬০০টাকার বেশি নয়। অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের সমাহার। কল্পনাও করতে পারবেন না বিছনাকান্দির সৌন্দর্য। বিস্ময়কর মানে এতটাই বিস্ময়কর। কাছেই দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্নাধারার তীব্র প্রবাহ। এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় হাজার কোটি পাথর। সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ। আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা।এ সব পাথর মেঘালয় পর্বতমালার ওপর থেকে প্রবাহিত ঝর্নার ধারায় চলে এসেছে পিয়াইন নদীর বিছনাকান্দি অংশে। মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে চেয়ে দেখতে বিছনাকান্দির চারপাশ।যত দেখবেন ততই মুগ্ধ হবেন। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে পাথর ভরা পিয়াইন নদীর সু-শীতল সেই জলে। শরীর এলিয়ে দিয়েই পাথর জলের বিছানায় আপনার মনে হবে, আহা কী শান্তি! যে বিছানা ছেড়ে হয়তো কোন কালেই উঠতে ইচ্ছে করবে না আপনার।